হাওযা নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, হুজ্জাতুল ইসলাম সাইয়্যেদ ইউনুস হায়দার রিজভী এক বক্তব্যে আরবাইন হোসেইনিকে অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের এক চিরস্থায়ী বার্তা এবং বিশ্বের সব নির্যাতিত মানুষের ঐক্যের প্রতীক হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তিনি এর ভূমিকা জাতির জাগরণ, ফিলিস্তিনের আদর্শের সমর্থন এবং পশ্চিমা মিডিয়ার সেন্সরশিপ ব্যর্থ করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন।
হিন্দুস্তানের এই আলেম ও গবেষক, নাজাফ থেকে কারবালা পর্যন্ত লক্ষাধিক মানুষের আরবাইন পদযাত্রার সময় বলেন যে আরবাইন হোসেইনি কেবল একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা জিয়ারতের আচার নয়, বরং এটি এক মহৎ মানবিক ও বিশ্বব্যাপী আন্দোলন, যা সব সময়ে অত্যাচার, স্বৈরাচার ও অবিচারের বিরুদ্ধে জীবন্ত বার্তা বহন করে। এই লাখো মানুষের সমাবেশ ইমাম হোসেইন (আ.)-এর অবিনশ্বর বিপ্লবের স্মারক এবং সব জাতির জন্য অনুপ্রেরণা যারা নির্যাতনের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়। প্রকৃতপক্ষে, এই পথে প্রতিটি পদক্ষেপই অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও মানব মর্যাদার পক্ষে অবস্থানের প্রতীক।
আরবাইনের গণমাধ্যমিক দিক নিয়ে তিনি বলেন, পশ্চিমা মিডিয়া বহু বছর ধরে এই মহিমান্বিত সমাবেশের সত্য গোপন ও সেন্সর করার চেষ্টা করছে। তারা আশঙ্কা করে যে কারবালা থেকে ন্যায়বিচার ও প্রতিরোধের বার্তা সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে। কিন্তু এই পদযাত্রার বিশালতা এবং বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আগত জিয়ারতকারীদের অভূতপূর্ব উপস্থিতি তাদের সব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিয়েছে এবং আরবাইনকে এক বৈশ্বিক ঘটনায় পরিণত করেছে।
তিনি আরবাইন হোসেইনির ফিলিস্তিন প্রসঙ্গের সংযোগ তুলে ধরে বলেন, ইমাম হোসেইন (আ.)-এর ত্যাগ ইতিহাসের সব নির্যাতিতের জন্য অনুপ্রেরণা ও শক্তির উৎস। ফিলিস্তিনের জনগণ, যারা বহু বছর ধরে দখল ও নির্যাতনের শিকার, আরবাইনের বার্তায় ধৈর্য ও দৃঢ়তার এক উজ্জ্বল উদাহরণ খুঁজে পায়। আরবাইন প্রকৃতপক্ষে সব নির্যাতিত মানুষের যৌথ ভাষা—এক ভাষা যা তাদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ করে এবং নতুন আশার আলো জ্বালায়।
আরবাইন পদযাত্রার আধ্যাত্মিক মর্যাদা প্রসঙ্গে হুজ্জাতুল ইসলাম রিজভী বলেন, এই যাত্রা শুধু শারীরিক ভ্রমণ নয় বরং এক আধ্যাত্মিক সফর। এই পথে প্রতিটি পদক্ষেপ হৃদয়কে ঈমানের আলোয় উজ্জ্বল করে এবং আত্মাকে পবিত্রতা, আল্লাহর নৈকট্য ও ক্ষমার দিকে নিয়ে যায়। আরবাইন পদযাত্রা এক বিশাল বিদ্যালয়, যেখানে মানুষ ত্যাগ, ধৈর্য, ভালোবাসা ও বন্দেগির পাঠ শেখে।
শেষে তিনি বলেন, আরবাইন হোসেইনির এই মহাসমাবেশ শুধু অতীতের গৌরবময় স্মৃতিই নয়, বরং আজ ও আগামী দিনের মানবতার জন্য এক স্পষ্ট ও চিরস্থায়ী বার্তা বহন করে। এই বৈশ্বিক আহ্বান সকল মানুষকে, ধর্ম, মাজহাব ও জাতীয়তার পার্থক্য অতিক্রম করে, স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার, ঐক্য ও মানব মর্যাদার পথে আহ্বান জানায়। তাই প্রতিটি প্রজন্মের উচিত আরবাইনকে জানা এবং এর বার্তাকে ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনে প্রয়োগ করা।
আপনার কমেন্ট